রাজ-সিংহাসনে উপবিষ্ট হইয়া আপন রাজত্বের তৃতীয় বৎসরে আপনার সমস্ত অধ্যক্ষ ও দাসগণের জন্য এক ভোজ প্রস্তুত করিলেন; পারস্য ও মাদিয়া দেশের বিক্রমী লোকেরা, প্রধানেরা ও প্রদেশাধ্যক্ষেরা তাঁহার সাক্ষাতে উপস্থিত হইলেন।
সেই সকল দিন সম্পূর্ণ হইলে পর রাজা শূশন রাজধানীতে উপস্থিত ক্ষুদ্র কি মহান্ সমস্ত লোকের জন্য রাজবাটীর উদ্যানের প্রাঙ্গণে সপ্তাহকালব্যাপী ভোজ প্রস্তুত করিলেন।
তথায় কার্পাসনির্ম্মিত শুক্ল ও নীলবর্ণ চন্দ্রাতপ ছিল, তাহা মসীনা-সূত্রের বেগুনে রজ্জু দ্বারা রৌপ্যময় কড়াতে মর্ম্মরস্তম্ভে নিবদ্ধ ছিল, এবং লাল, সাদা, সবুজ ও কাল মর্ম্মর পাথরে শিল্পিত মেজিয়াতে স্বর্ণময় ও রৌপ্যময় আসনশ্রেণী স্থাপিত ছিল।
সপ্তম দিন যখন রাজা দ্রাক্ষারসে প্রফুল্লচিত্ত ছিলেন, তখন তিনি মহূমন, বিস্থা, হর্বোণা, বিগ্থা, অবগথ, সেথর কর্ক্কস, অহশ্বেরশ রাজার সম্মুখে পরিচর্য্যাকারী এই সপ্ত নপুংসককে আজ্ঞা করিলেন,
আর কর্শনা, শেথর, অদ্মাথা তর্শীশ, মেরস, মর্সনা ও মমূখন, ইহাঁরা তাঁহার নিকটে ছিলেন; এই সাত জন পারস্য ও মাদিয়া দেশের অধ্যক্ষ রাজার মুখদর্শন করিতেন, এবং রাজ্যের শ্রেষ্ঠ স্থানে উপবিষ্ট ছিলেন।
তখন মমূখন রাজার ও অধ্যক্ষদের সাক্ষাতে উত্তর করিলেন, বষ্টী রাণী যে কেবল মহারাজের কাছে অপরাধ করিয়াছেন, তাহা নয়, কিন্তু অহশ্বেরশ রাজার অধীন সমস্ত প্রদেশের সমস্ত অধ্যক্ষের ও সমস্ত লোকের কাছে অপরাধ করিয়াছেন।
কেননা রাণীর এই কর্ম্মের কথা সমস্ত স্ত্রীলোকের মধ্যে রটিয়া যাইবে; সুতরাং অহশ্বেরশ রাজা বষ্টী রাণীকে আপনার সম্মুখে আনিতে আজ্ঞা করিলেও তিনি আসিলেন না, এই কথা শুনিলে তাহারা সচক্ষে আপন আপন স্বামীকে অবজ্ঞা করিবে।
আর পারস্যের ও মাদিয়ার যে কুলীনা মহিলারা রাণীর এই কার্য্যের সমাচার শুনিলেন, তাঁহারা অদ্যই রাজার সকল অধ্যক্ষকে ঐরূপ বলিবেন, তাহাতে অতিশয় অবমাননা ও ক্রোধ জন্মিবে।
যদি মহারাজের অভিমত হয়, তবে বষ্টী অহশ্বেরশ রাজার সম্মুখে আর আসিতে পাইবেন না, এই রাজাজ্ঞা আপনার শ্রীমুখ হইতে প্রকাশিত হউক; এবং ইহার অন্যথা যেন না হয়, এই জন্য ইহা পারসীকদের ও মাদীয়দের ব্যবস্থার মধ্যে লিখিত হউক; পরে মহারাজ তাঁহার রাজ্ঞীপদ লইয়া তাঁহা হইতে উৎকৃষ্টা আর এক রাণীকে দিউন।
তিনি এক এক প্রদেশের অক্ষরানুসারে ও এক এক জাতির ভাষানুসারে রাজার অধীন সমস্ত প্রদেশে এইরূপ পত্র পাঠাইলেন, “ প্রত্যেক পুরুষ আপন আপন গৃহে কর্ত্তৃত্ব করুক, ও স্বজাতীয় ভাষায় ইহা প্রচার করুক।”